এম.আর. মাহমুদ :
চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও আলোচিত বনদস্যু মোহাম্মদ ইউনুছ (ইনু ডাকাইত) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি………… রাজিউন। সংবাদটি পত্রিকায় পড়ার পর এলাকার অনেকেই মর্মাহত হয়েছে। ইনুর খ্যাতি শুধু বনদস্যু হিসেবে নয়। শাসক দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে গদিনশিন ছিলেন হতভাগা ইনু। একসময় বিভিন্ন মামলায় সাজাভোগ করার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে বালু ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করত সে। সাথে দলের নামা ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে বালু ব্যবসাও করেছে দলের গুরুদের আর্শিবাদে। তার এমন করুন পরিনতিতে এলাকাবাসি উল্লাসিত হলেও তাকে যারা ব্যবহার করে ফায়দা লুঠেছে তারা চরমভাবে হতাশ হয়েছে।
আজ থেকে এক যুগ আগের ইনুর চেহেরা আর মৃত্যুকালীন চেহেরার মধ্যে পার্থক্য ছিল আকাশ সমান। মৃত্যুকালীন সময় তার চেহেরা দেখে মনে হয়েছে আওয়ামীলীগের কমিটিতে তাকে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক করা যর্থাথই ছিল। কারণ ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলারই প্রয়োজন।
ইউনুছ (ইনু) অল্প বয়সেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করে আলোচিত অপরাধী হিসেবে কারা ও সাজা ভোগ করেছে। এক সময় তার নাম শুনলে বন কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দাড়িয়ে ১৭ জগ পানি পান করেছে। পরে চকরিয়া থানার ভূতপূর্ব ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন এর নেতৃত্বে পুলিশ ইনুকে পাহাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তার দেয়া তথ্যমতে অস্ত্রভান্ডারে অভিযান চালিয়ে অনেক অস্ত্রও উদ্ধার করেছিল। র্দীঘদিন কারা ও সাজা ভোগের পর ইউনুছ (ইনু) মুক্তি পেয়ে ধর্ম-কর্মে লিপ্ত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতেই বসবাস করছিল। পরে যুক্ত হয় বালু ব্যবসায়। ফাকে ফাকে চালিয়ে যেত তার সৃষ্ট অপরাধীদের নিয়ে ডাকাতি ও অপহরন বাণিজ্য। তবে বিষয়টি কেউ আমলে নেয়নি। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা ছিল পুরানু অপরাধী ইনু পুরোপুরি ভাল মানুষ হয়ে গেছে। একটি প্রবাদ না বলে হয় না “স্বভাব যায় না মলে, ইল্লত যায় না ধুলে। তেতুল যতই পুরাতন হওকনা কেন কখনোই মিষ্টি হবে না”। ইনুই তার জলন্ত প্রমাণ।
আসল কথা হচ্ছে ইনুর মুক্তির পর থেকে খুটাখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকার ডাকাতি ও অপহরন বাণিজ্য বেড়েই চলছিল। যা ছিল অনেকটা অপ্রতিরোধ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপহরনের শিকার লোকজন অপহরনকারী দলের কাছে মুক্তিপন দিয়ে মুক্ত হয়েছে। তবে অঘটন ঘটন পটিয়শি পুলিশ বলে বেড়াত তাদের চিরুনি অভিযানের ফলে অপহৃতরা মুক্তি পেয়েছে। আমজনতা তা নিরবে হজম করেছে। এলাকার সচেতন মহলের অভিমত অপহরনের পর ইনুর হাতে মুক্তিপনের টাকা গেলেই অপহৃতরা মুক্তি পেত। এ ক্ষেত্রে সে ছিল অনুঘটক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করেছে তার মাধ্যমে ২৩জন অপহৃত ব্যক্তি জিজিয়া করের বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছে। যা ছিল ওপেনসিক্রেট। কিন্তু কেউ এ ঘটনা প্রকাশের সাহস পেত না। পাহাড়ী এলাকার লোকজন বেশিরভাগই হতদরিদ্র। ইনু বাহিনীর সামনে তাদের অবস্থা ছিল পা ভাঙ্গা মুরগি যেমন শিয়ালের কাছে অসহায় তেমনই। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এ.বি.এম জসিম উদ্দিন দাবি করেছেন ইনু বাহিনীর লোকজন খুটাখালী ও ডুলাহাজারা বন এলাকার কয়েক কোটি টাকার গর্জন, সেগুনসহ নানা প্রজাতির মূল্যবান গাছ উজাট করেছে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন ছিল। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ইনু বাহিনীর পক্ষে এসব গাছ হজম করার মত শক্তি সামার্থ ছিলনা। উজাটকৃত গাছগুলো হজম করার পিচনে ছিল একটি শক্তিশালী সিন্টিকেট। ইউনুছের স্ত্রী দাবি করেছে তাকে ১৪ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পাগলীর বিল এলাকার একটি চা দোকান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে আটক করে নিয়ে যায়। তার স্বজনেরা চকরিয়া থানার সাথে যোগাযোগ করলে পুলিশ ইনুকে উদ্ধারের জন্য অভিযানে যাবে বলে আসস্তত করেন। কিন্তু ১৫ জুলাই শুক্রবার সকালে রামু উপজেলার ঈদগড় ধুমচি এলাকা থেকে পুলিশ তার গুলিবৃদ্ধ লাশ ও একটি দেশে তৈরি লম্বা বন্দুক উদ্ধার করে। ইনুর মৃত্যুর ব্যাপারে রামু থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে দুইটি পৃথক মামলা হয়েছে। কি জানি এ দুইটি মামলায় কে কখন আসামি হয়ে লাল দালানের মেহমান হয়। ইনুর মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে ডুলাহাজারা পাগলীর বিল এলাকায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। এলাকা বাসির প্রশ্ন ইনু ছিল ডুলাহাজারা ও খুটাখালী এলাকার একজন ত্রাস। তার পরও আওয়ামীলীগের মত একটি বিশাল সংগঠনের ইউনিয়ন কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের পদটি পাওয়ার পেছনে কাদের হাত ছিল তা কি জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অনুসন্ধান করে বেরকরবে। ইনুকে ওই দলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা হয়ত ত্রাস হিসেবে ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের পদটি দেয়নি। তার বর্তমান চেহেরা দেখেই মনে হয় পদটি দিয়েছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আজ সকলের কাছেই একটি প্রশ্ন ডুলাজাহারা আওয়ামীলীগ দেউলিয়া না হলে বনদস্যু ও অপহরনকারী দলের পালের গুদা কুখ্যাত ইনুকে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক করতে পারে! ডুলাহাজার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে কুপুকাত হওয়া জামাল হোসন স্বীকার করেছেন। ইনু তার কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিল।
এম.আর. মাহমুদ
চকরিয়া
মোবাইল: ০১৭১২-৮০২৭২৭
তারিখ: ১৬.০৭.২০১৬ইং
পাঠকের মতামত: